ঢাকা | মঙ্গলবার | ২রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১১ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

নতুন সরকারী চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে চাচ্ছে একটি দল: সালাহউদ্দিন আহমেদ

একটি রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার সম্ভাবনা উন্মোচন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি এটি এ কথা বলেন বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত একটি সেমিনারে, যেখানে ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউট্যাব) উদ্যোগে ‘চব্বিশোত্তর বাংলাদেশে তারুণ্যের ভাবনায় শিক্ষা ও কর্মসংস্থান’ শীর্ষক আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে গন্যমান্য বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে কী আশা ও পরিকল্পনা আমাদের צריכים তা নির্ধারণ করতে হবে। তিনি তরুণ প্রজন্মের ভাবনাকে গুরুত্ব দেয়ার ওপর জোর দেন এবং বললেন, তারও আগে থেকেই তিনি বিভিন্ন সভা-সেমিনার আয়োজন করেছেন তরুণদের নতুন চিন্তা ও ভাবনা জানার জন্য। তার মতে, চব্বিশোত্তর বাংলাদেশের প্রধান লক্ষ্য হলো পরিবর্তন।

তিনি আরো বলেন, মেধা, জ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার জন্য সকল ক্ষেত্রে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। সমাজের সব স্তরে কাজ করে যেতে হবে সামাজিক দায়বদ্ধতা অনুভব করে। বিশেষ করে শিক্ষকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা তরুণ প্রজন্মকে নতুন শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলে।

সালাহউদ্দিন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মূল প্রকৃতি হলো গবেষণাধর্মী ও মুক্তবুদ্ধির চর্চার কেন্দ্র। সেখানে খাতভিত্তিক গবেষণামূলক শিক্ষাব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে যাতে আমরা গবেষণার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মান অর্জন করে বিশ্ব দরবারে স্থান করে নিতে পারি। কর্মমুখী, আধুনিক ও কার্যকরী কারিকুলাম তৈরিতে জরুরি। পাশাপাশি, শুধু নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ নয়, এর পাশাপাশি শিক্ষার দৃষ্টিভঙ্গি ও ব্যবহারেও পরিবর্তন এনে সমাজের জন্য উপকারী করে তোলার জোর অনুরোধ করেন তিনি।

অতিরিক্ত, তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের জনসংখ্যার জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি দরকার। একাকী সরকারের ওপর নির্ভরশীল না থেকে নিজ উদ্যোগে আত্মনির্ভরশীল হয়ে কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর যেসব পরিবর্তন আনার প্রত্যাশা হয়েছে, তা সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন শুধু বৈষম্য কমানোর জন্য নয়, বরং দীর্ঘ সময়ের ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে জনতার রোষপ্রস্থান হিসেবে মূল। এই আন্দোলনসহ আরও শক্তিশালী করতে হবে দেশীয় সংকল্প ও সহযোগিতা।

এছাড়াও, মানসিক পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি জানান, কারণ আইনগত ও রাজনৈতিক সংস্কার তখনই সম্ভব যখন মনের আদর্শ, মনোভাব ও মূল্যবোধ পরিবর্তিত হয়। আওতা অনুযায়ী, গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করে স্বচ্ছ আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এর মাধ্যমে দেশের স্বাধিকার ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা সম্ভব হবে।

অন্যদিকে, তিনি উল্লেখ করেন, একটি দল বলেছে— তারা জুলাই সনদে গিয়ে গণভোটের প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের মত, দেশের নির্বাচন দিক থেকে এইভাবেই সমাধান হওয়া উচিত, যেখানে নির্বাচন ও তারিখের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল উপাদান একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নেবে। বর্তমানে কিছু রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার সুযোগ খুঁজছে, তবে তাদের কিছু দাবি-দাওয়া রয়েছে। আশা করি সব দিক বিবেচনা করে সুন্দর সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হবে। এ জন্য নহে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বা উর্ধ্বতন গোয়েন্দা সংস্থা প্রজ্ঞাপন ও আদেশ জারি করে এর আইনি ভিত্তি তৈরি করতে পারে। এসব কিছু বাস্তবতা অনুযায়ী ও আইনিকভাবেই হওয়া উচিত, যেন ভবিষ্যতে কোন পক্ষই বাতিলের দাবি তুলতে না পারে। সকলের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়াই সবচেয়ে উপযুক্ত।

আয়োজক ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, ইউট্যাবের মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন ও জাতিসংঘের সাবেক চিফ অব স্টাফ রেহান এ আসাদ।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রুয়েটের ভিসি অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুর রাজ্জাক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক লুৎফর রহমান ও অধ্যাপক নূরুল ইসলাম, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মো. শামীমসহ আরও অনেকে।

উপস্থিত বক্তার বক্তব্যে তারা বললেন, শিক্ষার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা প্রদান ও যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা। দীর্ঘদিনের সার্টিফিকেট ভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তন করে প্রকৃত দক্ষ ও জ্ঞানসম্পন্ন তরুণ তৈরি করতে হবে। সেই অনুযায়ী, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে বৈশ্বিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে হবে, যেখানে কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরত্ব দিয়ে গড়ে তোলা হবে।

উপসংহারে বক্তারা জানিয়েছেন, শিক্ষার মান উন্নত করতেই হবে, কারণ চাকরি প্রার্থীর সংখ্যা বাড়লেও পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারছে না। তাই বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যতের চাহিদা বিবেচনায় একটি দক্ষ ও কর্মক্ষম যুবশক্তি গড়ে তুলতে জোর দেওয়া হচ্ছে, যা দেশের উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি।