ঢাকা | বুধবার | ২০শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৬শে সফর, ১৪৪৭ হিজরি

সরকারের সিদ্ধান্ত: নাসা গ্রুপকেও সহায়তা দেবে শীঘ্রই

সরকার এবার নাসা গ্রুপকেও বাঁচানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যেন এই দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটি টিকে থাকে। করোনা মহামারীর পরে অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে, নাসা গ্রুপের কারখানা চালু রাখতে সরকার বিভিন্ন নীতিগত উদ্যোগ নিচ্ছে, যার মাধ্যমে হাজারো শ্রমিকের বেতন নিশ্চিত করতে চাইছে। এই পদ্ধতিতে গ্রুপটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঋণ খেলাপি থাকলেও, ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলার সুবিধা সহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর مقصد হলো যেন কারখানাগুলোর কার্যক্রম অটুট থাকে এবং শ্রমিকরা বেকার না হন। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বাংলাদেশ ব্যাংক এই উদ্যোগে সমর্থন দিচ্ছে। সূত্র জানায়, নাসা গ্রুপের ১০০ শতাংশ মার্জিনে বিদেশী ব্যাংকগুলো থেকে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলার জন্য তৎপরতা চালানো হচ্ছে, যেখানে আয় থেকে পাওনাদার ব্যাংকগুলো ঋণের কিস্তি তুলতে পারবে না। এই অর্থ প্রথমে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন, কোম্পানির অন্যান্য খরচে ব্যবহার হবে, পরে অতিরিক্ত অর্থ থাকলে ঋণ পরিশোধে লাগানো হবে। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতেও এই সুবিধা পাওয়ার জন্য দ্রুত ফাইলিং করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল রবিবার এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শেষে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও নাসা গ্রুপের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে আশার আলো দেখাচ্ছে, শ্রমিকরা কর্মক্ষেত্রে ফিরতে পারবেন ও কারখানাগুলো সচল থাকবে। নাসার ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মোহাম্মদ সাইফুল আলম বলেন, ‘আমরা আশা করছি, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন ও রপ্তানি আয় বজায় থাকবে। এই পরিস্থিতিতে সবাই একযোগে কাজ করলে আমরা অর্ডার পেয়েও যেহেতু পেরে উঠব।’ শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, ‘নাসা গ্রুপের কারখানা চালু রাখা এবং শ্রমিকদের বেতন নিশ্চিত করতে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি গত ৮-৯ মাস নিজেরা চালু থাকলেও এখন আর সক্ষম নয়, যদি এগুলোর কার্যক্রম বন্ধ হয়, তাহলে প্রায় ২৫-২৭ হাজার কর্মী বেকার হয়ে যাবেন। এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।’ উল্লেখ্য, এরআগেও সরকার বেক্সিমকো গ্রুপের শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে, যেখানে ৬ মার্চ ৫২৫ কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়। নাসা গ্রুপের অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। ১৯৯০ সালে শুরু হওয়া এই গ্রুপে বর্তমানে ৩৪টি কারখানা রয়েছে; পোশাক, বস্ত্র, স্পিনিং, লজিস্টিক, প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট ও কোয়ালিটি কন্ট্রোল সহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসা রয়েছে। চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, যা দীর্ঘ দিন ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠনের নেতৃত্বে ছিলেন। তবে তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির মামলা ও অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে, যা গ্রুপের কার্যক্রমে প্রভাব ফেলেছে। সিআইডি এবং অন্যান্য সংস্থার অনুসন্ধানে জানা যায়, নজরুলের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ ঋণ খেলাপি ও মানি লন্ডারিংয়ের মামলা চলছে। তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে তিনি জেলে আছেন। তার কারণে নাসা গ্রুপের কার্যক্রম ধীর হয়ে পড়েছে, ব্যাংকগুলো থেকে নতুন ঋণ ও অর্ডার পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে, এই সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। শ্রম ও আর্থিক বিভাগের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রত্যেকেই আশাকর্মীদের বেতনের প্রতি নজর রেখে কাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে অব্যাহত সমর্থন ও সহযোগিতার মাধ্যমে গ্রুপটি পুনরুদ্ধার ও আবার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু করতে ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে চান সংশ্লিষ্টরা। অনুরূপ পরিস্থিতিতে নাসা গ্রুপের মতো অন্য শিল্পখাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকেও রক্ষা করতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এই বিশেষ অবস্থানে, সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের ভবিষ্যত আরো ভালো হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হচ্ছে।