ইসরায়েলি যুদ্ধের দীর্ঘমেয়াদি অবরোধ ও ধারাবাহিক আক্রমণের কারণে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা এখন এক দারুণ মানবিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই অবরুদ্ধ এলাকায় অন্তত ১০ লাখ নারী ও কিশোরী জীবনসংকটে পড়েছেন, ভয়াবহ অনাহারে ভোগার মুখে। আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ), যারা শনিবার (১৬ আগস্ট) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরেছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
সংস্থাটির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গাজার নারীরা ও কিশোরীরা গণঅহন, সহিংসতা এবং বর্বর নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তারা জীবন বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় খাবার ও পানি সংগ্রহের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছেন, যেখানে গুলি চালানো বা হামলার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এর ফলে তারা বিপজ্জনক পথে হাঁটতে বাধ্য হচ্ছেন।’
ইউএনআরডব্লিউএ গাজার অবরোধ দ্রুত প্রত্যাহার করে সম্মিলিত মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, এই অঞ্চলে মানুশিক দুর্দশা এখন কোনো স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। গাজা এখন ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকটের মধ্যে পড়েছে। যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞের পাশাপাশি সৃষ্টি হয়েছে দুর্ভিক্ষের প্রকোপ, যেখানে হাজার হাজার মানুষ খাদ্য ও পানির জন্য হাহাকার করছে।
২০২৩ সালের মার্চ মাসে ইসরায়েল গাজার সব সীমান্ত বন্ধ করে দেয়, যার ফলে সাহায্য পাঠানো ট্রাকগুলো আটকে পড়েছে। কিছু সীমিত সরবরাহ ঢুকলেও তা লাখো ক্ষুধার্ত মানুষের চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এরই মধ্যে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি সতর্ক করে জানিয়েছে, গাজার মোট ২৪ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কয়েক দিন ধরে কোনো খাবার পাচ্ছে না।
এমন পরিস্থিতি চলতে থাকায় যুদ্ধের শুরু থেকে এই পর্যন্ত ইসরায়েলি আঘাতে প্রায় ৬১ হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে বেশ কিছু এলাকা, আর মানুষ দারুণভাবে বিপন্ন হয়ে পড়েছেন।
বিশ্লেষণে জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বরের পরে আন্তর্জাতিক আদালত গাজার যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গালান্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি আদেশ জারি করে। এছাড়া, গাজায় গণহত্যার অভিযোগেও ইসরায়েল মুখোমুখি হয়েছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের। এই সব ঘটনার মধ্য দিয়ে গাজা এখন এক ভয়ঙ্কর মানবিক ও আইনী ঝঞ্ঝাটে পড়ে রয়েছে।