ঢাকা | রবিবার | ১৭ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৩শে সফর, ১৪৪৭ হিজরি

ভারতীয় রাজধানীতে হুমায়ুনের সমাধিক্ষেত্রে গম্বুজ ধস, মৃত ৫

ভারতের দিল্লির দক্ষিণাঞ্চলীয় পূর্ব নিজামুদ্দিনে অবস্থিত ইতিহাসপ্রাচীন হুমায়ুনের সমাধিক্ষেত্রের গম্বুজ ধসে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দমকল বিভাগ জানায়, ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও কয়েকজন চাপা পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উদ্ধারকর্মীরা পাঁচটি লাশ উদ্ধার করেছেন, পাশাপাশি আহত ব্যক্তিদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনাস্থলে দমকলের পাঁচটি দল ও পুলিশ আধিকারিকরা উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। দুর্ঘটনার সময় সেখানে অনেক দেশি-বিদেশি পর্যটক উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ছোট, সবুজ রঙের ভবনের একপাশের ছাদ হঠাৎ ভেঙে পড়ে, তখন ভবনের ভেতরে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ জন ছিলেন, যার মধ্য piloto ইমামও ছিলেন। দুর্ঘটনার কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। ধারণা করা হচ্ছে, ধসে পড়া অংশটি প্রায় ২৫ থেকে ৩০ বছরের পুরোনো। এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে তদন্ত কর চলছে। মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ফলে সমাধিক্ষেত্রের গম্বুজের কাঠামো দুর্বল হয়ে থাকতে পারে, যার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় বা কাঠামোগত কোনো ত্রুটি থাকায়ও এই দুর্ঘটনার সম্ভাবনা অস্বীকার নয়। হুমায়ুনের দ্বিতীয় স্ত্রীর উদ্যোগে ১৫৬২ সালে নির্মিত এই সমাধিক্ষেত্র, যা বেলেপাথরে তৈরী। এটি স্থাপত্যে পারস্যের ‘চারবাগ’ (চার ভাগে বিভক্ত বাগান) নকশার পরিচয় দেয় এবং ভারতীয় শিল্পের সঙ্গে এক সুন্দর সংমিশ্রণ ঘটিয়েছে। এটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকাভুক্ত, এবং মুঘল স্থাপত্যকীর্তির প্রথম পূর্ণাঙ্গ উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত। ১৫২৬ সালে পানিপথের যুদ্ধের সময় বাবর দিল্লি জয় করেন, তবে পাঁচ বছর পর তার মৃত্যুর পর তার ছেলে হুমায়ুন সিংহাসনে আসেন। শেরশাহ সুরির কাছে পরাজিত হয়ে দেশ ত্যাগ করলেও শেরশাহের মৃত্যুতে হুমায়ুন পুনরায় দিল্লি দখল করেন। ১৫৬২ সালে এই সমাধির নির্মাণ শুরু হয়। মূলত লাল বেলেপাথর ও সাদা মার্বেল ব্যবহার করে এই সমাধি তৈরি, যার নকশায় পারস্যের ‘চারবাগ’ ও ভারতীয় শিল্পকলার সংমিশ্রণ দেখা যায়। এই স্থাপনা পরে আরও বহু মুঘল স্থাপত্যের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে আগ্রার বিশ্ববিখ্যাত তাজমহল। এটি মূলত হুমায়ুনের সমাধি নয়, বরং মুঘল বংশের প্রায় ১৫০ জনের কবর সমেত এক বৃহৎ নেক্রোপলিস, যা স্থপুরুষদের জন্য এক বিশেষ স্মারক। এর ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যিক মূল্যবোধের কারণে ১৯৯৩ সাল থেকে এটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা পায়।