ঢাকা | রবিবার | ১৭ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৩শে সফর, ১৪৪৭ হিজরি

বাংলাদেশের পেট্রোবাংলার সিদ্ধান্ত: ভারতীয় দুই তেল কোম্পানির ব্যাংক গ্যারান্টি প্রত্যাহার

বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) ভারতীয় দুই জ্বালানি কোম্পানি ওএনজিসি ভিদেশ (ওভিএল) এবং অয়েল ইন্ডিয়া (ওআইএল) এর ব্যাংক গ্যারান্টি প্রত্যাহার করেছে। এই ঘটনা ঘটে যখন বাংলাদেশের ও ভারতের মধ্যে চলমান কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন বেড়েছে। এই দুই কোম্পানি বাংলাদেশের দুটি অফশোর তেল ও গ্যাস ব্লকে কাজ করছিল।

দ্য হিন্দু বিজনেস লাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ব্যাংক গ্যারান্টি প্রত্যাহার হওয়ার পর ওভিএল ও ওআইএল বাংলাদেশের ওই ব্লকগুলো থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। প্রায় এক বছর আগে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কারণে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতা হারানোর পর, তিনি ভারতে আশ্রয় নেন এবং এখনও সেখানেই অবস্থান করছেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাঁকে ফেরত আনতে চিঠি পাঠানো হলেও ভারতের তরফ থেকে এই অনুরোধে সাড়া হয়নি।

শেখ হাসিনার ক্ষমতা হারানোর পর থেকে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ সংকুচিত হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশে ভারতীয় তৈরি পোশাক, খাদ্যপণ্য, জুস এবং তুলা জাতীয় পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, এর পাল্লায় পড়েছে বাংলাদেশও।

প্রথমদিকে, শেখ হাসিনা সরকারের সময় ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ওভিএল, ওআইএল এবং বাংলাদেশের পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স) একত্রে দুইটি ব্লকে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান করছিল। এতে প্রত্যেকের শেয়ার ছিল ৪৫ শতাংশ, এবং বাকি ১০ শতাংশ ছিল বাপেক্সের।

অয়েল ইন্ডিয়া গত মঙ্গলবার বিএসই-তে তাদের আর্থিক প্রতিবেদন দাখিল করে জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশের দুটি ব্লক (এসএস ০৪ ও এসএস ০৯) থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর জন্য তারা প্রায় ৩০৭ কোটি রুপি (প্রায় ৩১ কোটি ৫০ লাখ ডলার) প্রভিশন দেখিয়েছেন। ব্যাংক গ্যারান্টি প্রত্যাহারের এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ওনজিসি জানিয়েছে, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তারা এই দুই ব্লকের জন্য দরকারি ব্যাংক গ্যারান্টি প্রত্যাহার করেছে এবং জুলাইতে ব্লকগুলো থেকে উৎপাদনের চুক্তি বাতিলের অনুমোদন পেয়েছে।

প্রতিবেদন বলছে, ব্লকের কাজের বাধ্যবাধকতা পূরণে ব্যর্থ হয়ে ব্যাংক গ্যারান্টিগুলো প্রত্যাহার করা হয়েছে, এর ফলে এগুলো তাদের চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ফলাফল হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। অয়েল ইন্ডিয়া জানিয়েছে, এই ব্লকগুলোতে এখনো কোনো উত্তোলনযোগ্য জ্বালানি পাওয়া যায়নি, তাই অনুসন্ধান কার্যক্রমে ক্ষতি হয়েছে।

বাংলাদেশের এই ব্লকগুলোতে অনুসন্ধান কাজ চলছিল ২০১২ সালে, এবং ২০১৪ সালে পাঁচ বছরের জন্য প্রাথমিক অনুসন্ধান চুক্তি হয়। এখন এই কাজের সময়সীমা ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। অয়েল ইন্ডিয়া বলেছে, ব্লকগুলোতে সিসমিক জরিপ সম্পন্ন হয়েছে এবং কিছু কূপ খননের কাজ শেষ হয়েছে, যার ফলে বিনিয়োগের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য। প্রতিবেদনের শেষে বলা হয়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের এই টানাপোড়েনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যৌথ খনন পরিকল্পনাগুলো।