ঢাকা | রবিবার | ১৭ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৩শে সফর, ১৪৪৭ হিজরি

কালিগঞ্জে ওঝার ভ্রান্ত চিকিৎসায় ৮ম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রীর মৃত্যু

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলায় কথিত ওঝা আয়নাল হোসেনের অদক্ষ ও ভ্রান্ত চিকিৎসায় প্রাণ হারিয়েছে অষ্টম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী অহনা দাশ (১৫)। সাপে কামড়ানোর পর তার চিকিৎসা শুরু হয় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে থাকাকালীন। এই ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে মথুরেশপুর ইউনিয়নের মুকুন্দপুর গ্রামে।

অহনা দাশ মুকুন্দপুরের বাসিন্দা। সে ধুলিয়াপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ও নরেন্দ্রনাথ দাশের মেয়ে। পরিবার সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বিকেলে অহনা বাড়ির বারান্দায় বসে পড়াশোনা করছিল। সন্ধ্যার আগে এক বিষধর সাপ উঠোনে আসে এবং শিকার ধরতে ব্যর্থ হয়ে অহনার পায়ের আঙুলে ছোবল দেয় দুইবার। দুর্ঘটনা বুঝতে পেরে পরিবারের লোকজন তাকে দ্রুত ক্ষতস্থানের ওপর চারটি বাঁধন দিয়ে পাশের গ্রামে কথিত ওঝা আয়নাল হোসেনের কাছে নিয়ে যান।

ওই ওঝা তার চিকিৎসার জন্য বেড়ো দিয়ে অহনাকে হাঁটাহাঁটি করান। কিন্তু এতে তার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হতে শুরু করে। শেষমেশ ওঝা নিজে অপারগতা প্রকাশ করে অন্যত্র চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেন। এই খবর পেয়ে অহনাদের পরিবারের সদস্যরা দ্রুত তাকে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে চারটি এন্টিভেনম দেয়া হলে অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হয়, কিন্তু পরে তার অবনতি হলে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার গভীর রাতে অহনা মারা যায়।

শনিবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে পিরোজপুর মহাশ্মশানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

বর্তমানে সরকারি হাসপাতালগুলোতে সাপে কামড়ানোর জন্য এন্টিভেনমের ব্যবস্থা থাকলেও, গ্রামীণ মানুষের অজ্ঞতা ও অন্ধভাবে বিশ্বাসের কারণে তারা এসব সেবা নিতে বিমুখ। আয়নাল হোসেনের মতো ভণ্ড ওঝারা অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে মানুষের জীবন নিয়ে খেলছে। এই ধরনের প্রতারকদের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সমাজের বিভিন্ন মহল আগেই կոչ করেছে। সচেতন মহল মনে করছেন, এ ধরনের ঘটনা ঠেকাতে সচেতনতা ও শক্ত পদক্ষেপ জরুরি।