ঢাকা | শুক্রবার | ৪ঠা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৯ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

ব্লগার আরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে হেফাজতের পোস্টার, উদ্বেগে লেখক সমাজ

সম্প্রতি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের নানা স্থানে হঠাৎ করেই চোখে পড়ছে কিছু পোস্টার, যেখানে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী ব্লগার এমডি আরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় আক্রমণ চালিয়ে তার প্রকাশ্যে ফাঁসির দাবি জানানো হয়েছে। ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এসব পোস্টার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লাগিয়েছে বলে জানা গেছে।

এই ঘটনাকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানা মহলে শুরু হয়েছে তীব্র আলোচনা ও উদ্বেগ। লেখক, ব্লগার, মানবাধিকারকর্মী এবং সাধারণ নাগরিকেরা বিষয়টিকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে দেখছেন।

রাজধানী ছাড়াও রংপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, খুলনা ও অন্যান্য জেলায় শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, বাজার এলাকা, মসজিদ-মাদ্রাসা ও জনসমাগমস্থলে এ পোস্টার চোখে পড়ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পোস্টারগুলোর ভাষা কট্টর ও বিদ্বেষমূলক। সেখানে ব্লগার আরিফুল ইসলামকে ‘সমকামী’, ‘নাস্তিক’, ‘ইসলামের শত্রু’ বলে আখ্যা দিয়ে ‘নাগরিকত্ব বাতিল করে প্রকাশ্যে ফাঁসি দিতে হবে’—এমন আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি পোস্টারে তার ছবিও সংযুক্ত করা হয়েছে, যা আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকেও উদ্বেগজনক। উক্ত পোস্টারে যা লেখা রয়েছে তা হুবহু তুলে ধরা হলোঃ

শুরুতেই ‘নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবর’ লেখা এবং তার নিচে – ‘সমকামী, ব্যভিচারকারী, আল্লাহর লানতপ্রাপ্ত, ইসলামের শত্রু, নাস্তিক মুরতাদ এমডি আরিফুল ইসলাম -এর বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বাতিল করে প্রকাশ্যে ফাঁসি দাও, দিতে হবে।’ এর নিচে এমডি আরিফুল ইসলামের ছবি এবং সবশেষে লেখা – ‘প্রচারেঃ হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’।

জানা গেছে, এমডি আরিফুল ইসলাম একজন প্রথাবিরোধী লেখক এবং সমকামী অধিকার নিয়ে কাজ করেন। তিনি ধর্মীয় রক্ষণশীলতা, সাম্প্রদায়িকতা এবং মানবাধিকার বিষয়ে নিজের অবস্থান সবসময় সাহসিকতার সঙ্গে তুলে ধরেন। এর ফলে অতীতেও তাকে বিভিন্নভাবে হুমকির সম্মুখীন হতে হয়েছে।

এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া না গেলেও, সামাজিকভাবে অনেকেই এ ধরনের উসকানিমূলক পোস্টার ছড়ানোকে অশুভ সংকেত হিসেবে দেখছেন।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো অবিলম্বে এসব পোস্টার অপসারণ, ঘটনার তদন্ত এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে। তারা মনে করছে, এ ধরনের কার্যকলাপ শুধু ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নয়—রাষ্ট্রের সার্বিক সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকিস্বরূপ।