ঢাকা | সোমবার | ১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১০ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

সঞ্চয়পত্রের সার্ভারে জালিয়াতি: ছাত্রদলের সাবেক নেতাসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

বাংলাদেশ ব্যাংকের সঞ্চয়পত্রের সার্ভারে জালিয়াতি করে কোটি টাকার সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করার ঘটনা ঘটেছে। এই জালিয়াতির উন্নত কৌশল ও নীতিগুলোর মাধ্যমে অননুমোদিতভাবে সঞ্চয়পত্রের তথ্য পরিবর্তন করে অর্থ লোপাটের চেষ্টা করা হয়। ঘটনার মূল আসামি হিসেবে অভিযুক্ত হয়েছেন ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মোহাম্মদ মারুফ এলাহী রনি এবং তার সঙ্গে আরও চার জন।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাতের ঘটনাটি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পরিচালক আবুল খায়ের মো. খালিদ মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা অনুযায়ী, অন্য আসামিরা হলেন— মোহিউদ্দিন আহমেদ, এনআরবিসি ব্যাংকের দিনাজপুর শাখার গ্রাহক মো. আরিফুর রহমান মিম, এবং একজন আল আমিন যিনি পরিচয় শনাক্তকারী। পুলিশ ইতোমধ্যে আরিফুর রহমানকে মতিঝিল থেকে গ্রেফতার করেছে।

জালিয়াতির পেছনের কৌশল ছিল অসাধু চক্রের হাত— তারা জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের এনএসসি সার্ভারে অননুমোদিত প্রবেশ করে গ্রাহকের তথ্য বদলে সঞ্চয়পত্রের অর্থ অন্য ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করে। এভাবে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইউজার আইডি ব্যবহার করে একাধিক সঞ্চয়পত্রের নগদায়ন দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের ছক সাজায়।

সাম্প্রতিক সময়ে, ২৩ থেকে ২৭ অক্টোবরের মধ্যে তিনটি সঞ্চয়পত্রের তথ্য পরিবর্তন করে ডাচ-বাংলা ব্যাংক ও এনআরবিসি ব্যাংকের মোট ৭৫ লাখ টাকা স্থানান্তরের চেষ্টা চালানো হয়। তবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন দ্রুত পদক্ষেপের ফলে ৫০ লাখ টাকা উদ্ধার করে সরকারি ট্রেজারিতে ফেরত দেওয়া হয়।

এজাহারে বলা হয়, অভিযুক্ত আরিফুর রহমানের নামে ২5 লাখ টাকার অপ্রাপ্ত সঞ্চয়পত্র ভুয়া হিসেবে নগদায়ন করে তার হিসাবের মধ্যে জমা হয়। পরে ঢাকার দুটি ব্যাংক শাখা থেকে ওই টাকা উত্তোলন করা হয়। জালিয়াতির মাধ্যমে তার লেনদেনের সীমা ২ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ লাখ টাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।

অপরদিকে, ছাত্রদলের সাবেক নেতা মারুফ এলাহী রনির নামে থাকা ডাচ-বাংলা ব্যাংকের দুটি সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে ৫০ লাখ টাকা জমা হয়। এই সঞ্চয়পত্র দুটির মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর। তবে, সময়মতো জালিয়াতি ধরা পড়ে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা উত্তোলনের আগেই তা আটকে দেয়।

ঘটনার পর বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, বিএফআইইউ ও এনআরবিসি ব্যাংক পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সংশ্লিষ্ট ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ডধারী তিন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে computers গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের একজন কর্মকর্তা জানিয়ে বলেন, নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে নতুন ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ইস্যু করা হয়েছে। রবিবার থেকে সব কার্যক্রম স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।

এখন পর্যন্ত, এই জালিয়াতির কারণে দেশের সঞ্চয়পত্র ব্যবসায় ব্যাপক ভোগান্তি শুরু হয়েছে। মতিঝিল অফিসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্র বিক্রি ও নগদায়ন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে, যার ফলে গ্রাহকরা অসুবিধায় পড়েছেন। বর্তমানে, দেশের মোট সঞ্চয়পত্রের মূল্য তিন লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে, যার প্রায় ৩০ শতাংশই বিক্রি হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের মাধ্যমে। পাশাপাশি, বিএফআইইউ সন্দেহভাজন সব হিসাব জব্দ করেছে।