ঢাকা | রবিবার | ১৭ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৩শে সফর, ১৪৪৭ হিজরি

রাশিয়া একজন বিশাল শক্তি, ইউক্রেনের উচিত সমঝোতায় যাওয়া: ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন, ইউক্রেনের উচিত রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধের জন্য শান্তিপূর্ণ সমঝোতায় আসা। তিনি উল্লেখ করেছেন, রাশিয়া একটি বিশাল শক্তি, আর ইউক্রেন এই শক্তির কাছে খুবই ক্ষীণ। ট্রাম্পের এই মন্তব্য মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের গুরুত্বের ওপর জোর দেয়।

এর আগে আলাস্কায় এক বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পক্ষ থেকে ইউক্রেনের কাছ থেকে আরও ভূখণ্ড দাবি করার খবর এসেছে, যা আন্তর্জাতিক মনেকেন্দ্রের কেন্দ্রবিন্দুতে পাশাপাশি অবস্থান করছে। রোববার (১৭ আগস্ট) সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

বলা হয়, ট্রাম্প উল্লেখ করেন, তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জিলেনস্কিকে জানান, পুতিন যুদ্ধবিরতি মানতে রাজি আছেন যদি কিয়েভ পুরো দোনেৎস্ক অঞ্চল পরিত্যাগ করে। তবে এই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন জেলেনস্কি, বলেছেন, এমন দাবির গ্রহণযোগ্যতা নাও থাকতে পারে।

উল্লেখ্য, রাশিয়া ইতোমধ্যে ইউক্রেনের এক পঞ্চমাংশ দখল করে নিয়েছে, যার মধ্যে দোনেৎস্কের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ এলাকা রয়েছে। ট্রাম্প বলেন, শুধু যুদ্ধবিরতি নয়, একটি স্থায়ী শান্তিচুক্তি প্রয়োজন, যা সকলের জন্য স্বস্তিদায়ক হতে পারে। তাঁর ভাষায়, “সবাই জানে, ভয়াবহ এই যুদ্ধ শেষ করার জন্য একটি স্থায়ী শান্তিচুক্তি সবচেয়ে কার্যকর উপায়। কারণ এক্ষেত্রে শর্তবাজি থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং যুদ্ধ দ্রুত শেষ হয়।”

অপর দিকে, জেলেনস্কি মনে করেন, রাশিয়া যদি যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চায়, তাহলে শান্তি স্থাপনে বাধা সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, “যুদ্ধের মতো দমন-পীড়ন বন্ধ না হলে শান্তি আসবে না।” তবে মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে, যেখানে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।

পূর্ববর্তী সময়ের মত, এই বৈঠকও আবার নজর কেড়েছে, বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি মাসের ঘটনাগুলির সঙ্গে তুলনা করে। গত বছর হোয়াইট হাউসের আলোচনায় ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স জেলেনস্কিকে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছিলেন। ট্রাম্প আশা করছেন ভবিষ্যতে পুতিনের সঙ্গে তিন পক্ষের বৈঠক হতে পারে, যেখানে সমস্যা সমাধানের হাতিয়া খোঁজা হবে।

উরোপের বিভিন্ন দেশ এই মধ্যস্থতার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে, তবে তারা ইউক্রেনের জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখতে এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জার্মানি ও অন্যান্য ইউরোপীয় নেতারা আশা করছেন, সোমবারের বৈঠকে এই বিষয়ে আলোচনা হবে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া ইউক্রেনে বড় আক্রমণ শুরু করায় পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই সংঘর্ষ ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়ানক এবং মারাত্মক। এতে হাজারো সাধারণ মানুষ নিহত বা আহত হয়েছেন।

ট্রাম্পের মন্তব্য মূলত মস্কোর দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখা হচ্ছে, কারণ পুতিন প্রথমে বলে আসছেন, এই সংঘর্ষের সমাধান খুবই জটিল, কারণ দুই পক্ষের অবস্থান বেশ বিপরীত। তিনি ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়টিও আবারো অটক করে রাখার কথা বলেছেন।

ফক্স নিউজে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি ও পুতিন আলোচনা করেছেন, ভূখণ্ড হস্তান্তর এবং ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে, এবং তারা “মূলত” একমত। ট্রাম্প আশাবাদী, তারা চুক্তির খুব কাছাকাছি, তবে এর জন্য ইউক্রেনের পক্ষকে রাজি থাকতে হবে।

প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, জেলেনস্কিকে ঐতিহাসিক সমঝোতায় যেতে হবে, কারণ “রাশিয়া একটি বড় শক্তি, আর তারা নয়”।

জেলেনস্কি অবশ্য বারবার বলে আসছেন, সংবিধান পরিবর্তন না করলে কোনো ভূখণ্ড ছাড়তে পারছেন না। তিনি দোনেৎস্কের স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাতোরস্কের মতো শহরগুলোকে রাশিয়ার অগ্রযাত্রার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ হিসেবে দেখছেন।

তিনি আরও বলেছেন, যুদ্ধের পরে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির জন্য ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া খুবই জরুরি। ট্রাম্প এই বিষয়ে ইতিবাচক সংকেত পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি মন্তব্য করেছেন, ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা ন্যায্য ও কার্যকর শান্তিচুক্তির জন্য অপরিহার্য। অন্যদিকে, পুতিন জানিয়েছেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিতে হবে, তবে এতে বিদেশি সেনা থাকতে দেওয়া হবে না।

একই সাথে, দীর্ঘ দিন পর এই বৈঠকটি পুতিনের জন্যও বড় কূটনৈতিক সাফল্য বলে মনে হচ্ছে, যদিও এক সপ্তাহ আগে ট্রাম্প রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছিলেন। পরিস্থিতি আইনী ও কূটনৈতিক জটিলতায় ভরা থাকলেও, আলোচনার প্রসার ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের আশ্বাস জাগিয়েছে।