ফিলিপাইনJUতে জলাশয় নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে প্রেসিডেন্ট ফের্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের বিরুদ্ধে। তার পদত্যাগের দাবিতে গত রবিবার (৩০ নভেম্বর) রাজধানী মানিলায় হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ পরিচালনা করে। এই আন্দোলন শুরু হয় লুনেটা ন্যাশনাল পার্ক থেকে, যেখানে ‘কিলুসাং বায়ান কোন্ত্রা-কোরাকোট’ বা জনগণের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের ব্যানারে বাঁধা দেয়ার জন্য মিছিল গতি নেয়। প্রচুর সংখ্যক বিক্ষোভকারী দাবি করে, তাদের মধ্যে অন্তত ২০ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন। অনেককে মার্কোস ও ভাইস প্রেসিডেন্ট সারয দুতার্তের মুখোশ পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়, যা তাদের দুর্নীতির প্রতীকের মতো করে উপস্থাপন করে। রাস্তায় বড় আকৃতির প্রতিকৃতি ও প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘মার্কোস পদত্যাগ করো’ এবং ‘দুর্নীতিগ্রস্ত সব নেতাকে জবাবদিহি করতে হবে।
জনরোষ এই ‘ট্রিলিয়ন-পেসো কেলেঙ্কারির’ ব্যাপারে কয়েক মাস ধরেই বৃদ্ধি পেয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, ক্ষমতাধর রাজনীতিবিদরা জলাশয় প্রকল্পে বিলিয়ন-পেসো ঘুষ নিয়েছেন। তদন্তে দেখা গেছে, অনেক প্রকল্প ভুয়া বা নিম্নমানের নির্মাণে অর্থ অপচয় হয়েছে। পাশাপাশি, চলতি বছর দুইটি বড় ধরনের টাইফুনে ২৫০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারানোর পর ক্ষোভ আরও দানা বেঁধেছে।
এর জেরে সরকার ইতোমধ্যেই দুইজন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। একই ঘটনায় সাবেক আইনপ্রণেতা জালদি কো অভিযোগ করেন, মার্কোস নিজে ১,১০০ কোটি পেসো (প্রায় ১৭০ মিলিয়ন ডলার) বরাদ্দ বাড়ানোর নির্দেশ পাঠিয়েছিলেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ২০২৪ সালে তিনি ব্যক্তিগতভাবে মোটা অঙ্কের টাকা মার্কোসের বাসভবনে পৌঁছে দিয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি জাপানে পালানোর পথে।
মার্কোস এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, অনলাইনযে কেউ অভিযোগ করুকনা কেন, তিনি এর জন্য দায়ী নন। দেশবাসীর কাছে তিনি বলেন, ‘যদি সত্যিই কিছু থাকে, তাহলে তারা দেশে ফিরে আসুক।’
চলমান বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ২১ বছর বয়সী ছাত্র ম্যাট ভোভি বলেন, ‘সেপ্টেম্বরে পুলিশের দমন-পীড়নের পরও আমি রাস্তায় ফিরেছি। সেই সময়ের ঘটনায় ৩০০ জনের বেশি গ্রেপ্তার হয়, আমি নিজেও মারধর ও পাঁচ দিন জেল খেটেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যেন বোঝা না হয়, আমাদের ন্যায্য বিচার করতে হলে মার্কোস ও তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট সারয দুতার্তের পদত্যাগ জরুরি।’
উল্লেখ্য, সারয দুতার্ত রদ্রিগো দুতার্তের মেয়ে। তিনি একই ধরনের দুর্নীতির অভিযোগে আছেন।
এদিকে, বিরোধী দল ও ক্যাথলিক চার্চের সমর্থনে আলাদাভাবে ‘ট্রিলিয়ন পেসো মার্চ’ নামে এক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয় ইডিএসএ অ্যাভিনিউতে, যেখানে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ জড়ো হন। তারা ডানপন্থী এ আন্দোলনও দুতার্তের পদত্যাগের দাবি তোলে, তবে মার্কোসের বিরুদ্ধে আরও স্পষ্ট প্রমাণের অপেক্ষায় থাকছে।
প্রেসিডেন্ট ভবনের আশপাশে নিরাপত্তা দিতে ১২ হাজারের বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিক্ষোভকারীরা মালাকানিয়াংয়ের প্রবেশপথ থেকে এক ব্লক দূরে ব্যারিকেডে আটকা পড়ে। তারা প্রচণ্ড শ্লোগান দেয়, ‘সব দুর্নীতিবাজের জন্য কারাগার খালি করো।’
বামপন্থী সংগঠন বায়ানের নেতা রেমন্ড পালাতিনো বলেন, মার্কোস বাজেট অনুমোদন করেছেন, তাই দুর্নীতির দায় এড়াতে পারেন না। তিনি বলেন, ‘উভয় নেতা যদি পদত্যাগ করেন, তাহলে দেশের পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।’ তিনি একটি আবাসিক বেসামরিক সরকারের মধ্যবর্তী সময়ের জন্য সমঝোতা কমিটি গঠনেরও আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতির মুখপাত্র ক্লেয়ার কাস্ত্রো এসব দাবি ‘অসংবিধানিক’ ও ‘স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
জুলাই মাসে, মার্কোস ‘স্টেট অব দ্য নেশন’ ভাষণে দুর্নীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রশাসনের জন্য একটি ‘ইনডিপেনডেন্ট কমিশন ফর ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ (আইসিআই) গঠনের ঘোষণা দেন। এই কমিশন ৯ হাজারের বেশি প্রকল্পের ৫৪৫ বিলিয়ন পেসোর অনিয়মের তদন্ত শুরু করেছে। এছাড়া সিনেট ও সংসদ নিজেদের অনুসন্ধান চালাচ্ছে। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০২৩ সালে জলাধার প্রকল্পে ১১৮.৫ বিলিয়ন পেসো দুর্নীতির কারণে অপচয় হয়েছে।
অভিযুক্তদের মধ্যে মার্কোসের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও পরিবারের সদস্য মার্টিন রোমুয়ালদেজের নামও উঠে এসেছে, যার ফলে স্পিকার পদ থেকে জালদি কো পদচ্যুত হয়েছেন। তবে, আইসিআই এখনও প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তদন্ত শুরু করেনি। বিশ্লেষকদের মতে, প্রফেসর সল ইগ্লেসিয়াসের অভিমত, ‘আইসিআই গঠন করেও তিনি দুর্নীতির দায় থেকে মুক্ত হতে পারেননি।’ সেপ্টেম্বরের বিক্ষোভ দমন-পীড়নের পর সরকারের গ্রহণযোগ্যতা কমে যাচ্ছে।









