ঢাকা | সোমবার | ১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১০ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

মিয়ানমার পারমাণবিক সক্ষমতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে

রাশিয়ার সহযোগিতায় এখন মিয়ানমারের জান্তা সরকার পরমাণু কর্মসূচির দিকে গভীর মনোযোগ दे díছে। দেশের চলমান সংঘাত, দারিদ্র্য ও ক্ষুধা বাড়ার মধ্যেই জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং ‘পারমাণবিক উন্নয়ন’কে জাতীয় অগ্রগতির অন্যতম প্রতীক হিসেবে দেখানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতির খবরে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড অ্যাটমিক উইক ফোরাম ২০২৫-এ অংশ নেন মিন অং হ্লাইং। সেখানে তিনি রাশিয়ার সহায়তায় মিয়ানমার গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে বলে দাবি করেন, এটি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংস্থা রোসাটমের সঙ্গে কোনও এক চুক্তির ফল।

অতীতে, ১৫ আগস্ট মিয়ানমার সরকার ‘ন্যাশনাল কমিটি ফর দ্য ইমপ্লিমেন্টেশন অব নিউক্লিয়ার এনার্জি’ গঠন করে, যার মধ্যে রয়েছে দৌর্যবান প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তারা। এই কমিটি ও রোসাটমের পরিকল্পনায় মিয়ানমারে প্রথমবারের মতো ‘নিউক্লিয়ার ইনফরমেশন সেন্টার’ স্থাপন করা হয়েছে এবং দেশের দক্ষিণে ছোট আকারের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। সামরিক প্রশাসন দাবি করছে, এই উদ্যোগ সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও প্রযুক্তি উন্নয়নের জন্য।

আন্তর্জাতিক মহল কিন্তু এই প্রচেষ্টাকে সন্দেহের চোখে দেখে। অতীতে, জান্তার সরকার উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে গোপন পরমাণু সহযোগিতার চেষ্টা করেছিল। দেশের ওপর চলমান দমননীতি ও সামরিক দমনমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এই ‘শান্তিপূর্ণ’ বলে দাবি করা প্রকল্পের পেছনে নানা গোপন পরিকল্পনা চলছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

মিয়ানমারের সামরিক শাসকরা রাশিয়ায়ের সঙ্গে পাশাপাশি চীন ও ভারতের সঙ্গেও পারমাণবিক প্রযুক্তি সহযোগিতার আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা বলছেন, এই সহযোগিতা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে। তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, মিয়ানমারের সামরিক শাসকরা এই পরমাণু কর্মসূচিকে তাদের শাসন টেকিয়ে রাখার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন।

১৯৬২ সাল থেকে দীর্ঘ সময় ধরে চলা সামরিক শাসনের ইতিহাসে বহুবার ‘উন্নয়ন’ ও ‘আধুনিকীকরণ’-এর অঙ্গীকারের ফুলে ফুলে ভরা হলেও, বাস্তবতা তা কিছুই হয়েছে না। দারিদ্র্য, গৃহযুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার ভিতরই দেশটি জড়িয়ে পড়েছে। এখন সমালোচকরা মনে করছেন, এই ‘পরমাণু উন্নয়ন’ পরিকল্পনাও আগের মতোই এক ধরনের নতুন প্রচার মাত্র, যা আবারও দেশের অন্ধকার যুগের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

এখন যখন সংঘাত, অর্থনৈতিক পতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের চাপে মিয়ানমার খুবই বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে, তখন সামরিক সরকারের এই পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা দেশটিকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতে পারে।