ঢাকা | মঙ্গলবার | ২রা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১১ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

নির্বাচিত সরকার ছাড়া ব্যবসার উন্নতি সম্ভব নয়: ব্যবসায়ীদের অভিমত

দেশে নির্বাচিত সরকার না থাকলে ব্যবসার পরিবেশও উন্নতি হবে না, এমনটাই মত প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। বুধবার (৫ নভেম্বর) গুলশানে এক ইংরেজি আয়োজিত অর্থনৈতিক সংস্কার বিষয়ক সেমিনারে তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। সেমিনারে বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতারা তাঁদের নানা সমস্যা ও অসুবিধার কথা তুলে ধরেন।

সেমিনারে শ্রম আইন ও শ্রমিক সংগঠনের গঠনসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ওপর ভবিষ্যতের নির্বাচিত সরকারের উপর অারোপ করার সুপারিশ করেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি, জাতিসংঘের অত্যন্ত দরকারি তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ সময়মতো না হলে সেটি পিছিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনোয়ার হোসেন এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ।

বলা হয়, শ্রম আইন ও শ্রমিক সংগঠনের গঠনের বিষয়ে বাংলাদেশ থাই চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, ‘‘এখন কেন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে? তিন মাস পরই নির্বাচিত সরকার আসবে, তাদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে দিন। এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সংস্কার আলোচনা হচ্ছে, কিন্তু কোন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। কোনো মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা পিটিএ হচ্ছে না।’’

অন্যদিকে, এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সংগঠন বিকেএমইএ-র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘‘আমাদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দেখে এখন উত্তরণের বিষয়টি একেবারেই উপযুক্ত নয়। আমরা ইতিমধ্যে ১৬টি সংগঠনের মাধ্যমে এই দাবি জানিয়েছি। সরকারের কাছে অনুরোধ, প্রয়োজনে জাতিসংঘ এসে পরিস্থিতি তদন্ত করুক। আমরা চাই, সরকার এলডিসি থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার জন্য আবেদন করুক।’’

ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, ‘‘নির্বাচিত সরকার এখনই প্রয়োজন। আগামী ১০ থেকে ১৫ বছর মানুষ ভোটের মাধ্যমে সরকার না নির্বাচিত হলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে না।’’

সিরামিক শিল্পের নেতা মইনুল ইসলাম বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে ক্রেতারা আতঙ্কিত, তারা এখন পণ্য কিনতে চাইছেন না। এই পরিস্থিতির একমাত্র সমাধান হল নির্বাচন।’’

লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘‘আমাদের দায়িত্ব নেওয়ার সময় ব্যবসা সহজ করার জন্য ব্যবস্থা ছিল ৯৯ শতাংশ খারাপ। এখন সেটা ৯৫ শতাংশে উঠেছে, ধীরে ধীরে আরো উন্নতি হবে। তবে এর জন্য আলোচনা দরকার।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমান সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সিঙ্গেল উইন্ডো চালু করেছে, যার ফলে দুই মাসে প্রায় ১২ লাখ কাগজপত্রের সাক্ষাৎ কমে গেছে। এর ফলে নাগরিকরা সরাসরি ব্যাংকে গিয়ে কাজ করেন না।’’

বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়ে শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘‘এখন বিদেশি বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকি নিয়ে ব্যস্ত থাকছেন, কিন্তু যে দেশের বিমানবন্দর আগুনে পুড়ে যায়, সেখানে বিনিয়োগের মানায় কি? এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীরা অনিশ্চয়তায় থাকেন।’’

খেলাপি ঋণের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি জানিয়ে ইউসিবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান শরীফ জহীর বলেন, ‘‘অঙ্গসংগত উদ্যোগে এই মামলা দ্রুত সমাধান না হলে, ব্যাংকগুলো অস্থির হয়ে পড়বে। এই কারণে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ব্যবসায়ীদের জন্য প্রস্তুত থাকা আরও জরুরি।’’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিজিএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি ইনামুল হক খান, বাংলাদেশ অ্যাগ্রো কেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে এস এম মোস্তাফিজুর রহমান, মিডল্যান্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আহসান-উজ জামান, আকিজ বশির গ্রুপের সিওও মোহাম্মদ খোরশেদ আলম প্রমুখ।