ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বছর দিন কাটছে। প্রতিদিন মারা যাচ্ছে অসংখ্য বেসামরিক মানুষ, যার মধ্যে শহুরে শিশুর সংখ্যা বেশি। এসব মৃত্যু ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গোটা বিশ্বের মতো ক্রীড়াঙ্গনও গভীরভাবে শোকাহত।
বিশেষ করে সম্প্রতি ইতালির উদিনে অনুষ্ঠিত ব্লুনার্জি স্টেডিয়ামে টটেনহাম হটস্পার বনাম প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি) ফুটবল ফাইনালে এমন এক মুহূর্ত উপস্থিত হয়, যা মনে রাখার মতো। ম্যাচ শুরুর আগে উয়েফা মাঠে ‘শিশু ও বেসামরিক মানুষ হত্যা বন্ধ করো’ শ্লোগানযুক্ত ব্যানার প্রদর্শন করে। দুই দলের খেলোয়াড়রা সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে থাকাকালে ব্যানারটি তাদের সামনে প্রদর্শিত হয়, যা মনে করিয়ে দেয় বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের প্রয়োজনীয়তা।
আরও যে চিত্রটি নজর কাড়ে, তা হলো ফাইনালের একেবারে আগে বা পরে নয়, বরং ম্যাচ চলাকালীনই। উয়েফা প্রত্যক্ষ করেছে ফিলিস্তিনের গাজা থেকে দুই শরণার্থী শিশুকে দেখতে পাচ্ছে। ম্যাচ শেষের পর উয়েফার সভাপতি আলেক্সান্দা সেফারিনের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দুই শিশুর ছবি সামনে আসে, যেখানে তারা পদক গ্রহণের সময় উয়েফার পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে ছিলেন। উয়েফার এক্স হ্যান্ডল থেকে এই ছবিটি পোস্ট করে বলা হয়, ‘ফিলিস্তিনের দুই শরণার্থী শিশু উয়েফা সভাপতি আলেক্সান্ডার সেফারিনের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তারা উয়েফার শিশুদের জন্য গড়া ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে ২০২৫ উয়েফা সুপার কাপ ফাইনালে উপস্থিত হয়েছেন।’
উয়েফার নিয়ম অনুসারে, ম্যাচ চলাকালীন বা স্টেডিয়ামে কোনও রাজনৈতিক বার্তা বা পক্ষপাতিত্বের ছবি প্রদর্শনের অনুমতি নেই। তবে, ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুপার কাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইরাক ও আফগানিস্তান থেকে শরণার্থী শিশুদের আনাও হয়েছিল। তবে কোনও দেশের যুদ্ধ বা সংকটের সরাসরি উল্লেখ সেখানে ছিল না।
অতীতে, ৭ আগস্ট ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (পিএফএ) জানিয়েছিল যে, দক্ষিণ গাজা উপত্যকায় মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা অপেক্ষা করার সময় ইসরায়েলি হামলায় একফলে মৃত্যু হয় সুলেইমান নামে এক ফুটবল কর্মীর। তিনি ‘ফিলিস্তিনের পেলে’ নামে পরিচিত ছিলেন। এই ঘটনার প্রতিবাদে নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় এ ব্যাপারে পিএফএ ও মিডিয়ায় প্রকাশিত ছবি ও বার্তা দেন পিএসজির তারকা ফুটবলার মোহাম্মদ সালাহ। তিনি লিখেছেন, ‘আপনাদের কি বলতে পারবে কোথায়, কীভাবে ও কেন মারা গেছে সুলেইমান?’
উয়েফার এই মহড়া ও তার সংলগ্ন বার্তা ছিল এক দৃষ্টান্ত। পাশাপাশি, উয়েফার ফুটবল ম্যাচের উত্তেজনায় ভরপুর একটি ঘটনা ছিল, যেখানে ৮৪ মিনিট পর্যন্ত ২-০ গোলে এগিয়ে থাকা পিএসজি নাটকীয়ভাবে ২-২ গোল করে ড্র করে। অতঃপর টাইব্রেকারে প্যারিসের দল টটেনহামকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো উয়েফা সুপার কাপের ট্রফি জয় করে নেয়। এই জয় শুধু ফুটবল রোজগারের জন্য নয়, বরং মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণে ও মানবতা ও শান্তির বার্তা পৌঁছানোর এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।