ঢাকা | সোমবার | ১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১০ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ভারতজুড়ে সতর্কতা জারি করে নিরাপত্তা বাড়ানো

দিল্লির লাল কেল্লার কাছে একটি গাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত নয়জন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনার পাশাপাশি আরও অনেকে আহত হয়েছেন। ভারতের নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে স্থানীয় পুলিশ ও আধিকারিকরা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। খবর বিবিসির।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘটনাস্থলের কাছাকাছি হাসপাতালগুলোতে অন্তত ৩০ জন আহতের চিকিৎসা চলছে। দিল্লি পুলিশের মুখপাত্র সঞ্জয় ত্যাগী বলেছেন, ওই ঘটনায় একটি হুন্ডাই আই-টুয়েন্টি গাড়িতে বিস্ফোরণ হয়। গাড়িতে মোট তিনজন যাত্রী ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, বিস্ফোরণটি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে তারা কয়েক মুহূর্তের জন্য হতবাক হয়ে যান। একজন বলেন, ‘বিস্ফোরণে আমার ঘরের জানালার কাঁপুনি ধরেছিল।’

ঘটনাস্থলের খুব কাছাকাছি থাকা একটি দোকানের মালিক বলেন, ‘বিস্ফোরণের পরে আমি তিনবার পড়ে গিয়েছি। তবে পরে নিজেকে সামলে উঠে পরিস্থিতি বুঝতে পেরেছি।’

এই হামলার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাতেই ঘটনাস্থলে যান এবং পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন। এছাড়াও, দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিরোধী দল নেতা রাহুল গান্ধীসহ বিভিন্ন দেশের নেতারা এই ঘটনার নিন্দা ও শোকবার্তা প্রকাশ করেছেন।

দিল্লিতে বিস্ফোরণের পর থেকেই কলকাতা, মুম্বাইসহ অন্যান্য বড় শহরগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পিলিগ্রিমের জন্য বিশেষ তল্লাশি চালানো হচ্ছে, এবং বিমানবন্দরগুলেতেও কঠোর সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

এছাড়া, মার্কিন দূতাবাসও দিল্লিতে সতর্কতা জারি করেছে। মার্কিন নাগরিকদেরকে লাল কেল্লা ও চঁদনি চক এলাকায় যাওয়ার নিষেধ জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে, জম্মু-কাশ্মীরের পুলিশ দাবি করেছে, উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানায় তল্লাশি চালিয়ে প্রায় তিন হাজার কিলো বিস্ফোরক, নানা ধরনের রাসায়নিক উপাদান, চারটি পিস্তল ও বন্দুক উদ্ধার করা হয়েছে। এতে দুই চিকিৎসকসহ সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা জয়েশ-এ-মুহাম্মদ ও আনসার গাজওয়াতুল হিন্দ নামে সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করা হচ্ছে। তবে জানা গেছে, দিল্লির বিস্ফোরণের সঙ্গে এই গ্রেপ্তারকৃতদের কোনও সম্পর্ক নেই।

রাত.externalভাবে ঘটনাস্থলে গিয়ে অমিত শাহ বলেছেন, আমাদের তদন্ত দল ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড এবং অন্যান্য সংস্থা দিয়ে এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, দ্রুত এই ঘটনাটির সত্যতা উদঘাটন করে সাধারণ মানুষের সামনে ফলাফল প্রকাশ করা হবে। তিনি জানান, উত্তরপ্রদেশের সন্ত্রাসবিরোধী স্কোয়াড, কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা ঘটনাস্থলে রয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের সময় তারা ঘটনাস্থলের খুব কাছাকাছি ছিলেন। একটি প্রত্যক্ষদর্শী বলছেন, ‘সিগন্যাল লাল ছিল। গাড়িগুলি সবাই দাঁড়িয়ে ছিল, হঠাৎই বিস্ফোরণ ঘটলো। এরপর বিভিন্ন গাড়িতে আগুন ধরে যায়; আহত অনেককে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা গেছে। আমি নিজেও দিল্লি পুলিশের সঙ্গে হাতে হাত লাগিয়ে অনেককে উদ্ধার করেছি।’

একজন অটোরিকশা চালক জিশান বলেছেন, ‘আমার খুব কাছে একটি গাড়ি চলছিল, কয়েক ফুটের ব্যবধানে। হঠাৎ ওই গাড়িটিই বিস্ফোরণে ঝলসে যায়।’

আরেক জন অ্যাম্বুলেন্স চালক মুহাম্মদ আসাদ জানান, বিস্ফোরণের পরে তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখেন, অনেক গাড়ির মধ্যে আগুন জ্বলছে এবং আহত ব্যক্তিরা চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছেন।

এক স্থানীয় ব্যবসায়ী ওয়ালিউর রহমান জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের সময় তিনি তার দোকানে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এতো জোরে বিস্ফোরণ হলো যে আমি জীবনে কখনো এর মতো শব্দ শুনিনি। সেই আওয়াজে আমি তিনবার মাটিতে পড়ে গেছি, তবে পরে নিজেকে সামলাতে পেরেছি। তখন আশেপাশের সবাই দৌড়ে পালাচ্ছিল।’

আরেকজন বাসিন্দা রাজধর পান্ডে জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের সময় তিনি তার বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বলছেন, ‘একটি আগুনের গOle যেন গিলে খেতে আসছিল। বিস্ফোরণের শব্দ শোনার পরে আমি নিচে নেমে আসি, এবং আমার বাড়ির জানালা কেঁপে উঠেছিল।’

এখনো ঘটনাটির তদন্ত চালানো হচ্ছে এবং পুরো দেশ পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখছে।