ঢাকা | রবিবার | ১৭ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৩শে সফর, ১৪৪৭ হিজরি

নাহিদ ইসলামের দাবি: শেখ মুজিব জাতির জনক নন, তবে তার ত্যাগ স্বীকার করি

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক হিসেবে গণ্য করেন না বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁর মতে, শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করলেও তার শাসনামলে দেশের উপর নানা ট্রাজেডি ঘটেছে। তিনি এসব মন্তব্য আজ শুক্রবার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে করেন।

নাহিদ ইসলাম লেখেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের জাতির জনক নন। আমরা তার ত্যাগ স্বীকার করি, স্বাধীনতা সংগ্রামে তার ভূমিকা সম্মান করি। কিন্তু তার শাসনামলের কিছু দিক ও ঘটনা আমাদের গভীর আঘাত করে। শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ভারতের একটি উপনিবেশ রাজ্যে পরিণত হয়েছিল। ১৯৭২ সালে তার শাসনামলে জনবিরোধী সংবিধান আরোপিত হয়, লুটপাট, রাজনৈতিক হত্যা ও একদলীয় বাকशাল গড়ে ওঠে।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট রাজনীতির আড়ালে মুজিব ও মুক্তিযুদ্ধের নামের আড়ালে রাজনৈতিক মূর্তি পুজো করা হয়ে থাকে, যা মূলত জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। এই সময়ে অত্যাচার, লুটপাট চলতে থাকে এবং নাগরিকদের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়। এভাবেই আধুনিক জমিদারির দেখা মিলে যা গণতন্ত্রের ছদ্মবেশে চালানো হয়। তবে সবকিছুর মধ্যেও মুক্তিযুদ্ধ ছিল সকল মানুষের সংগ্রাম। দলীয় স্বার্থে বাংলাদেশকে তার পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার করে দুর্নীতি ও দমনপীড়ন চালিয়ে যায় আওয়ামী লীগ।

নাহিদ ইসলাম জানান, জুলাইয়ে তার নেতৃত্বে এক গণঅভ্যুত্থান হয়, যা দেশের জমিদারী প্রথাকে ধ্বংস করে। তিনি বলেন, ২০২৪ সালে জনগণের বিদ্রোহ এই অন্যায় ব্যবস্থা ও ফ্যাসিবাদকে শেষ করে দেবে। আর কোনো ব্যক্তি বা পরিবার বাংলাদেশের নাগরিক অধিকার কেড়ে নিতে পারবে না। তিনি স্পষ্ট করেন, ‘জাতির পিতার’ উপাধি কোনো ঐতিহাসিক মর্যাদার নাম নয়, বরং এটা ক্ষমতা সংকোচ ও ফ্যাসিবাদকে প্রশ্রয় দেওয়ার হাতিয়ার। বাংলাদেশে সব নাগরিকের সমান অধিকার আছে, এবং কোনো একেকটি ব্যক্তি এর মালিকানা দাবি করতে পারে না।

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘শেক মুজিব ও মুক্তিযুদ্ধের নামে যে মুজিববাদ তা মূলত একটি ফ্যাসিস্ট আদর্শ। আমাদের সংগ্রাম ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, বরং ফ্যাসিস্ট মানসিকতা ও বিভাজনের বিরুদ্ধে। মুজিববাদ বিভাজন, জোরপূর্বক গুম, হত্যা, ধর্ষণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে যুক্ত। দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার, ইসলামোফোবিয়া, সাম্প্রদায়িকতা ও সংখ্যালঘু দের ভূমি দখল, এসবই তার দিক। বিদেশি শক্তির মুখে সার্বভৌমত্ব বিক্রি করা অপরাধ। ষোল বছর ধরে মুজিবের নামের আড়ালে এক ধরনের আধিপত্য ও অন্যায় চাপ সৃষ্টি হয়।

তিনি শেষ করেন, ‘মুজিববাদ একটি বিপদের নাম। এটির প্রতিরোধে রাজনৈতিক, আদর্শিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আমাদের উদ্দেশ্য একটি প্রজাতন্ত্র, সার্বভৌম ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণ, যেখানে ক্ষমতা একজন ব্যক্তির কাছ থেকে নয়, জনগণের হাতে থাকবে। বাংলাদেশ কারো সম্পত্তি নয়, এটি একটি গণপ্রজাতন্ত্র।