আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বলেছেন, প্রতিটি অপারেশনের একটা ঝুঁকি থাকে। এই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে রোগীর মৃত্যু ঘটলে তো আর চিকিৎসককে দোষ দেওয়া যায় না। তবে যে কোনো ধরনের অপারেশন করতে হলে যোগ্য ও দক্ষ চিকিৎসক, সার্জন, অ্যানেসথেসিওলজিস্ট, নার্স এবং প্রয়োজনীয় সব ধরনের সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে আছে কি না, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এ ধরনের সব সুযোগসুবিধা না থাকার পরও যদি অপারেশনে রোগীর মৃত্যু হয় তাহলে তা ফৌজদারি অবহেলা পর্যায়ে পড়বে। এক্ষেত্রে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তিনি বলেন, এ ধরনের অপরাধের জন্য বিদ্যমান আইনেই শাস্তির ব্যবস্থা আছে। শুধু আইন থাকলেই তো আর হবে না, এর সঠিক ও কার্যকর প্রয়োগ ঘটানো দরকার।
গতকাল মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) রাতে টেলিফোনে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বিচারপতি খায়রুল হক এ কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বিএমডিসির গাইডলাইন যেন চিকিৎসকরা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন, সেটা তাকে নিশ্চিত করতে হবে। বিএমডিসির গাইডলাইন না মেনে যদি কোনো চিকিৎসক কাজ করেন এবং তার ফলে রোগীর মৃত্যু হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে খড়গহস্ত হতে হবে। কারণ স্বাস্থ্যমন্ত্রী একজন ভালো চিকিৎসকই নন, একজন ভালো মানুষও বটে। তার যথেষ্ট মানবিকতা রয়েছে। দ্রুতই এসব ক্ষেত্রে যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, উনি সেটা নেবেন বলেই আমার বিশ্বাস।’ তিনি বলেন, ‘বহির্বিশ্বে হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রতিটি মৃত্যুর ওপর একটা অডিট হয়ে থাকে। এই অডিটে কী কারণে রোগীর মৃত্যু হয়েছে তা বেরিয়ে আসে। আমাদের দেশে এটা চালুর পদক্ষেপ নিতে হবে।’
বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, দেশে লাইসেন্সবিহীন যেসব হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে, তা বন্ধ করতে হবে। যদি চলে, তাহলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, ‘আমার বিশ্বাস চিকিৎসকরা ইচ্ছা করে তো আর কাউকে মারেন না। এ ধরনের ঘটনায় যত্রতত্র চিকিৎসকদের গ্রেফতার করাও ঠিক নয়। ঘটনার সঠিক তদন্ত করে যদি অপরাধ প্রমাণিত হয়, তখনই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। নইলে চিকিৎসকরা ডিমোরালাইজড হয়ে পড়বেন।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের বেশির ভাগ চিকিৎসকই চিকিত্সাসংক্রান্ত বিএমডিসির নীতিমালা মেনে রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করেন। যেসব চিকিৎসক এই নীতিমালা না মেনে চিকিৎসা দেন এবং রোগীর জীবন ঝুঁকিতে ফেলেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সবধরনের সেফগার্ড ও লজিস্টিক সাপোর্ট ছাড়া যদি কোনো হাসপাতাল ও ক্লিনিককে মানুষের চিকিৎসাসেবা করার সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে তা সরকারের অবহেলা পর্যায়ে পড়ে। এ কারণে একটি হাসপাতাল ও ক্লিনিককে লাইসেন্স দেওয়ার আগে সরকারকে নিশ্চিত হতে হবে যে, সেখানে সব ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট আছে কি না। এসব সুযোগ-সুবিধা যদি না থাকে, তাহলে সেসব হাসপাতাল ও ক্লিনিককে অনুমতি দেওয়ার কোনো সুযোগই নাই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে এসব বিষয় কঠোরভাবে নজরদারি করতে হবে। এছাড়া হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে যেসব যন্ত্রপাতি রয়েছে, সেগুলো কার্যকর আছে কি না এবং যেসব ওষুধ রোগীকে দেওয়া হচ্ছে, তার গুণমান বজায় রয়েছে কি না, সেটাও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে দেখভাল করতে হবে। কারণ আমরা প্রায়শই দেখি যন্ত্রপাতি হাসপাতালে পড়ে আছে কিন্তু তা সচল নেই। এক্ষেত্রে রোগীরা দুর্ভোগে পড়েন। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে দৃষ্টি দিতে হবে।’