তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা নিয়ে করা রিভিউ আবেদনের দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সব রাজনৈতিক দল আপিল বিভাগে আবেদন জানিয়েছে। এই বিষয়ে আগামী মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) শুনানির জন্য দিন নির্ধারিত করেছে আদালত। আইনজীবী শিশির মনির জানিয়েছেন, সামনে সাংবিধানিক বড় ছুটি থাকবে, তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমাধান প্রয়োজন। সেটি হলো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রিভিউ শুনানি এখনও শেষ হয়নি। এ বিষয়ে শুনানির জন্য লিস্টে থাকলেও আলোচনা হয়নি। পরে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, আমরা সর্বোচ্চ লিভ দেয়ার চেষ্টা করলেও পুরো শুনানি শেষ করা সম্ভব নয়। তখন আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘মাই লর্ড, এটা দিলেই আপাতত কিছুটা কাজ এগোবে।’ এ সময় আদালত আগামী ২৬ আগস্ট এ বিষয়ক শুনানির দিন নির্ধারিত করে। ২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধনী (তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা) বাতিলের রায় প্রদান করা হয়। এর আগে এই রায় কিছু নির্বাচনের জন্য হয়েছিল, যা পরে উচ্চ পর্যায়ে বাতিল হলেও সেই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তির আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত বছর অক্টোবরে রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেছেন, পাশাপাশি সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমানের মতো ব্যক্তিরাও আবেদন করেছেন। এছাড়াও, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মহাসচিব অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার গত বছর অক্টোবরেও পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেছিলেন। ২০০৮ সালে বাংলাদেশে সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্রেক্ষাপটে, যা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়েছিল। এরপর ২০১১ সালে এই ব্যবস্থা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর দলীয় সরকারের অধীনে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হলেও, প্রত্যেকটি নির্বাচনই ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে, বহুবার ‘একতরফা’, ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার’, এবং ‘রাতের ভোটের’ মতো সমালোচনার শিকার হয়েছে। গত বছর গণঅভ্যুত্থান ও রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী সরকার পতনের পর, ভবিষ্যতে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার আলোচনায় আরও জোরদার হয়। এই আলোচনা সংশ্লিষ্ট সকলের মনে এক ধরনের ঐক্য সৃষ্টি করেছে যে, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনই গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি।
